স্টিফেন কিং প্রায় ৫০ টির মতো বই লিখেছেন। এবং আমেরিকা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই নোবেল পুরস্কারের জন্য আলোচনায় থাকছেন। তার উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে হলিউডের অনেকগুলো জনপ্রিয় মুভি। এখনও অসাধারণ পাঠক ও লেখক এই ভদ্রলোকের কাছ থেকে নিত্য অনুপ্রেরণা খুঁজতে পারে তরুণ লেখককুল। বই প্রকাশে তার প্রথমদিককার যে ব্যর্থতা তা অনুপ্রেরণার। লেখালেখির জগতে এই দমওয়ালা ম্যারাথন শিল্পীর কাছ থেকে শিখতে পারি অনেক কিছুই। তার আত্মজীবনীমূলক লেখা ‘অন রাইটিং’ লেখকদের জন্য হতে পারে সেরা এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
লেখকদের জন্য স্টিফেন কিং এর ১৪ টি পরামর্শ:-
০১. টেলিভিশন দেখা বাদ দাও, পড় যত পারো:
‘তুমি যদি লেখক হতে চাও তাহলে টেলিভিশন দেখা বাদ দিতে হবে। এটা সৃষ্টিশীলতার জন্য বিষাক্তকর। লেখকদেরকে নিজেদের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে এবং নিজের কল্পনাশক্তির বিকাশ করতে হবে। এর জন্য যত সম্ভব পড়তে হবে।’
স্টিফেন কিং যেখানেই যায় সাথে বই থাকে। এমনকি খাওয়ার মাঝখানেও পড়তে দেখা যায়। তার মতে: ‘তুমি যদি লেখক হতে চাও তাহলে সবকিছুর উপরে তোমাকে দুটি কাজ করতে হবে: অনেক পড়, অনেক লেখো’।
লেখালেখির ঘরে টেলিভিশন, টেলিফোন বা ভিডিও গেমসের গুরুতর বিরোধি কিং।
০২. অন্যকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে সময়ের অপচয় করো না:
ভালো লিখতে গেলে যে সবার কাছে ভালোভাবে গৃহীত হবে এমন কথা নেই। বিভিন্ন সমালোচনা আসবে কিন্তু সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নিজের মানের সাথে, ভঙ্গির সাথে আপোষ করা যাবে না। একসাথে আসলে সকল পাঠককে সন্তুষ্ট করা যায় না।
০৩. লিখো প্রথমত তোমার জন্য:
তুমি লিখো তার পেছনের কারণ হচ্ছে এটা তোমাকে আনন্দ দেয়, পরিপূর্ণতার স্বাদ দেয়। এই আনন্দ নিয়ে যদি তুমি লিখতে পারো তাহলে সেটা আজীবন ধরে রাখতে পারবে।
০৪. লেখার সময় দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও:
লেখা একটি গভীর মনোযোগের কাজ। তোমার লেখার টেবিলটা ঘরের কোণার দিকে হলে ভালো। মনোযোগে সমস্যা করতে পারে এমন সকল ধরণের জিনিস থেকে দূরে থাকবে। দরজা বন্ধ করে লিখবে, দ্বিতীয়বার সম্পাদনার সময় দরজা খোলা রাখতে পারো।
০৫. অতিরিক্ত ক্রিয়া বিশেষণ এবং দীর্ঘ অনুচ্ছেদ লেখা থেকে বিরত থাকো:
স্টিফেন কিংয়ের মতে ক্রিয়া বিশেষণ লেখকদের বন্ধু নয়। বড় অনুচ্ছেদ পড়া ও দেখার পক্ষে বিরক্তিকর। এজন্য সহজ ও সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ রাখা লেখকদের অনেক বড় যোগ্যতা।
‘সে বললো’ ‘ও বললো’ এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
০৬. গ্রামার নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাবে না:
ভাষার সাধারণ ব্যবহারে আমরা গ্রামার নিয়ে মাথা ঘামাই না। এজন্য লেখার প্রয়োজনে গ্রামারের চেয়ে সহজ প্রকাশের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরী।
০৭. ভালো লেখকের মাদক নিতে হয় না:
অনেক লেখক নিজের লেখালেখির জন্য মাদক সেবনকে গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ মনে করেন। এটা হাস্যকর দাবি মনে করেন স্টিফেন কিং।
০৮. লেখালেখিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে:
লেখালেখিতে মনোযোগ দিতে না পারলে, কোন বইয়ে শতভাগ মনোযোগ দিতে না পারলে বই বন্ধ করে দাও এবং অন্য কাজে মনোযোগ দাও।
০৯. প্রথম খসরা তিনমাসে শেষ করবে:
স্টিফেন কিং প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা লিখতে পছন্দ করেন। তিনমাসে শব্দের হিসাবে সেটা দাড়ায় ১,৮০,০০০। প্রথম খসরা সেটা যত বড়ই হউক না কেন তিনমাসে শেষ করতে হবে। প্রথম খসরাতে লম্বা সময় নিলে অনেক সময় নিজের কাছেই গল্প অপরিচিত হয়ে যেতে পারে।
১০. কেটে ফেলার সাহস রাখতে হবে:
প্রথম খসরা শেষে সম্পাদনার সময় প্রয়োজনীয় কাটাছেড়ার কাজ করতে ইতস্তত করা যাবে না। প্রয়োজনে নিজের পছন্দের অনেক জিনিসও কেটে ছেটে ফেলতে হবে। প্রথম খসরা শেষ করার ছয় সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার পড়তে হবে। তখন নিজের লেখা নিজের কাছেই ভিন্ন মনে হবে। নির্মোহভাবে সম্পাদনার কাজ শুরু করে দিতে হবে।
১১. পড়, পড় এবং পড়:
তুমি লেখক কারণ তুমি প্রচুর পড়ো। তুমি লেখালেখিতে ভালো করো কারণ তুমি প্রচুর পড়ো আর প্রচুর লেখো।
১২. লিখ আনন্দের জন্য:
তুমি লিখ প্রচুর টাকা পয়সা বা খ্যাতি কামানোর জন্য নয় বা নারীর কাছে আকর্ষনীয় হওয়ার জন্য নয়। লেখালেখির দুনিয়া এক জাদুর দুনিয়া। সেটা উপভোগ করতে হবে।
১৩. বিয়ে করো, স্বাস্থ্যবান থাকো এবং সুখী জীবন যাপন করো:
তার লেখালেখির পেছনে সফলতার জন্য দুটি জিনিসের অবদান স্বীকার করেছেন কিং: তার শারীরিক সুস্থ্যতা এবং তার বিয়ে। নিজের জীবনে শক্ত ভারসাম্য রাখা উচিত। মানবিক থাকতে হবে। মানুষকে দেখতে হবে, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে, মানুষের সাথে মিশতে হবে।
১৪. লিখতে হবে প্রতিদিন:
কোন লেখা শুরু করলে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন লিখে যেতে হবে। যদি থেমে যাই তাহলে চরিত্রগুলো মাথা থেকে হারিয়ে যেতে পারে, গল্পের গতিধারা পাল্টে যেতে পারে। নিয়মিত লেখা বন্ধ করে দিলে প্রথম দিকে যে উত্তেজনা ছিলো সেটা হারিয়ে যেতে বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
তথ্যসূত্র:
অন রাইটিং, স্টিফেন কিং
বিজনেস ইনসাইডার, ওপেন কালচার ডট কম
Editor at thebdsf.com.
I read books to read people. And I write and talk about people.
Poetry is my passion, philosophy is my obsession, history is my lesson. Trying heart and soul to make Bangladesh Study Forum (BDSF) a hub for the youths of today who will determine the future course of this nation.
You can help me to enrich myself by sharing your best thoughts and suggestions here: sabidin.ibrahim@gmail.com
You can collect all of my books from Rokomari: www.rokomari.com/book/author/40494/সাবিদিন-ইব্রাহিম
Here are my social accounts where you can stay connected and share your opinions with me.